ভিসা করতে কি কি লাগে এবং ভিসা কিভাবে করতে হয় জানুন

ভিসা একটি অনুমতি পত্র যা কোন একটি দেশে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন হয়। ভিসা করতে কি কি লাগে এটি নির্ভর করে ভিসার ধরনের উপর। ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ভিসা রয়েছে। আপনি যে ধরনের ভিসার আবেদন করবেন এবং যে দেশের ভিসার জন্য আবেদন করবে সবকিছু মিলিয়ে নির্ভর করবে ভিসা করতে কি কি লাগবে। আর ভিসা কিভাবে করতে হয় এটি জানা না থাকলে জেনে নিন।

ভিসা করতে কি কি লাগে এবং ভিসা কিভাবে করতে হয়

ভিসা কি?

ভিসা হলো এক ধরনের অনুমতি বা প্রামাণপত্র, যা একটি দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ, থাকা বা কাজ করার জন্য প্রয়োজন। ভিসা ছাড়া কোনো বিদেশি দেশ ভ্রমণ করা সাধারণত সম্ভব নয়, কারণ এটি দেশের নিরাপত্তা এবং অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভিসা ডকুমেন্টের মাধ্যমে বিদেশে একজন ব্যক্তির থাকা নিয়ে বৈধতা নিশ্চিত হয় এবং ভিসার মাধ্যমে অন্য দেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে। যেমনঃ

  • রেগুলার বা স্ট্যাম্পড ভিসা
  • ই ভিসা
  • অন এরাইভাল ভিসা

ভিসা কত প্রকার?

ভিসা সাধারণত ভ্রমণের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ক্যাটাগরি হয়ে থাকে। ভিসার কিছু সাধারণ ধরন হলোঃ

  1. ট্যুরিস্ট ভিসা (পর্যটকদের জন্য, যারা স্বল্প সময়ের জন্য ভ্রমণ করেন।)
  2. বিজনেস ভিসা (ব্যবসায়িক কাজে ভ্রমণের জন্য)
  3. স্টুডেন্ট ভিসা (বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য) 
  4. ওয়ার্ক পারমিট ভিসা (চাকরি বা কাজ করার জন্য)
  5. ট্রানজিট ভিসা (অন্য কোনো দেশে যাওয়ার পথে সাময়িকভাবে ওই দেশে প্রবেশের অনুমতি)
  6. ডিপ্লোম্যাটিক ভিসা (কূটনৈতিক ব্যক্তিদের জন্য।)
  7. রেসিডেন্ট ভিসা (যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য বসবাস করতে চান তাদের জন্য)
  8. ফ্যামিলি ভিসা (পরিবার বা আত্মীয়দের সাথে থাকতে চাইলে)
  9. মেডিকেল ভিসা  (চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে)

ভিসা করতে কী কী লাগে?

আবেদন প্রক্রিয়া এবং দেশভেদে ভিসার ডকুমেন্ট ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, তবে সাধারণত যেসব তথ্য বা কাগজপত্র এর মাধ্যমে ভিসা প্রসেসিং করা হয় এবং অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলঃ

  • ভিসা আবেদন ফর্ম
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • Covid 19 সনদ
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লেটার।
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট।
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • ভ্রমণের প্রমাণপত্র
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • ইনভাইটেশন লেটার (যদি প্রয়োজন হয়)
  • ভ্রমণ বীমা
  • বায়োমেট্রিক তথ্য অনেক দেশ আঙুলের ছাপ এবং ছবি সংরক্ষণ করে থাকে।
  • ভিসা ফি রশিদ

ভিসা আবেদন ফরম সাধারণত কাঙ্খিত দেশের মিশনের ওয়েবসাইট থেকে পূরণ করতে হয়। অথবা দূতাবাসে গিয়েও আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করা যায়, তবে বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে বর্তমানে অনলাইনেই ভিসা আবেদন করে আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হয়। পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ছয় মাস মেয়াদী পাসপোর্ট হতে হবে এবং বৈধ পাসপোর্ট হতে হবে, এবং যে ছবি দিতে হবে সেই ছবিটি অবশ্যই সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড ( 45x35mm ডিজিটাল ফটো ৬ মাসের বেশি পুরানো নয় ) হতে হবে, এটি বাধ্যতামূলক।

করোনা ভ্যাকসিন সনদ একক দেশের এক এক মডেলের অনুমোদন দিয়ে থাকে, তবে বেশিরভাগ দেশে ফাইজার এর সনদ গ্রহণযোগ্য।

কোন ভিসা করতে কি লাগে?

প্রত্যেক ভিসার জন্য বিভিন্ন ধরণের কাগজপত্র এবং প্রমাণপত্রের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত দেশের ভিসা খোলা আছে সে সমস্ত দেশের জন্য যা লাগতে পারে উদাহরণস্বরূপঃ

ট্যুরিস্ট ভিসা

সাধারণত কোন দেশে ভ্রমণের জন্য এবং কিছু নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করার জন্য এই ভিসা প্রযোজ্য হয়। সাধারণত সর্বোচ্চ তিন মাসের জন্য কার্যকর হয়ে থাকে। যেকোনো দেশের টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে গেলে যে সমস্ত ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় তা হল

  1. ভিসা আবেদন ফরম
  2. পাসপোর্ট
  3. ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  4. ছবি
  5. হোটেল বুকিং ডকুমেন্ট

স্টুডেন্ট ভিসা

স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য যে সকল ডকুমেন্ট অবশ্যই প্রয়োজন পড়বে সেগুলো নিম্নে ক্রমানুসারে উল্লেখ করা হলোঃ

  1. আগের পড়াশোনার সার্টিফিকেট।
  2. IELTS সার্টিফিকেট।
  3. স্টাডি গ্যাপ।
  4. আনকন্ডিশনাল ইউনিভার্সিটি অফার লেটার
  5. ব্যাংক স্পনসর লেটার।
  6. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লেটার।
  7. মেডিকেল সার্টিফিকেট।

বিজনেস ভিসা

ব্যবসায়িক কাজের উদ্দেশ্যে যেতে হলে অবশ্যই উক্ত দেশের অভিবাসন নীতিমালা এবং শর্তসাপেক্ষে ভিসা প্রযোজ্য হবে যা হলো বিজনেস ভিসা, এই ভিসাটি পেতে হলে বেশ কিছু কাজ আপনাকে অবশ্যই করে নিতে হবে এ বিষয়ে আপনি যে দেশের ব্যবসা করবেন সেই দেশের কোন পরিচিত ব্যবসায়ী রেফারেন্স দরকার হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়িক আমন্ত্রণ পত্র, ব্যবসার প্রমাণপত্র

মেডিকেল ভিসা

জরুরি চিকিৎসা করার জন্য কোন ব্যক্তিকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ভিসার প্রয়োজন হয় তা হলো মেডিকেল ভিসা, এই ভিসার মাধ্যমে ব্যক্তি শুধুমাত্র চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারবে।মেডিকেল ভিসা তাড়াতাড়ি হাতে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো অবশ্যই সঠিক দিতে হবে।

  • বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি
  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি ২” বাই ২”।
  • ঠিকানার প্রমাণস্বরুপ বিদ্যুৎ/গ্যাস/পানি বিলের ফটোকপি।
  • বাংলাদেশী ডাক্তারের নিকট হতে প্রত্যয়নপত্র বা প্রেসক্রিপশন।
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অনেক সংখ্যক নাগরিক বিভিন্ন আলাদা আলাদা দেশে ভ্রমণ করে শুধুমাত্র কাজের উদ্দেশ্যে, কেউ চাকরি করে কিংবা কেউ কোন কোম্পানির অধীনে কাজ করে। এবং এই কাজের জন্য যে ডকুমেন্টের দরকার হয় তা হলো ওয়ার্ক পারমিট। একেক দেশের ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্য একেক ধরনের ডকুমেন্টের দরকার হয়, তবে সাধারণত যে সমস্ত ডকুমেন্টের দরকার হয় তা হলঃ

  • বৈধ পাসপোর্ট
  • সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের রঙিন ছবি
  • মেডিকেল সার্টিফিকেট
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
  • চাকরির অফার লেটার
  • কোম্পানির প্রমাণপত্র
  • স্পন্সর লেটার

রেসিডেন্ট এবং ফ্যামিলি ভিসা

যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য কোন দেশে থাকতে চায় তাদের জন্য রেসিডেন্ট ভিসার প্রয়োজন হয়, প্রেসিডেন্ট ভিসা সাধারণত সচরাচর কোন দেশ দেয় না, আর অন্যদিকে আপনি যদি কোন দেশে অবস্থান করে থাকেন তাহলে আপনি আপনার ফ্যামিলির লোকদের জন্য ফ্যামিলি ভিসা আবেদন করতে পারবে। এবং এই ভিসার মাধ্যমে আপনি আপনার ফ্যামিলির লোকজনদের আপনার কাছে নিয়ে আসতে পারবেন। ফ্যামিলি ভিসার জন্য অন্যান্য সাধারণ ডকুমেন্টস এর সাথে আপনার উক্ত দেশের থাকার বিভিন্ন ডকুমেন্ট ,   ,

  • কমপক্ষে ছয় মাস মেয়াদী পাসপোর্ট
  • রেসিডেন্ট কার্ড ( ফ্যামিলি ভিসা ক্ষেত্রে )
  • রেমিটেন্স রশিদ
  • ছবি
  • জব কার্ড
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট
  • ব্যক্তির মেডিকেল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট,
  • বিবাহের সনদপত্র / তালাক সনদপত্র ( ফ্যামিলি ভিসা ক্ষেত্রে )
  • স্বামী/স্ত্রীর জন্ম সনদপত্র ( ফ্যামিলি ভিসা ক্ষেত্রে )
  • এন আইডি কার্ড / জন্ম সনদ
  • ইত্যাদি

ভিসা কিভাবে করতে হয়?

প্রথমত কোন দেশে যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদন করতে হয়, আর ভিসা আবেদন করার জন্য যে দেশে যাবেন সেই দেশের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং ভিসার ধরন সিলেক্ট করে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এর পরে অনলাইনের মাধ্যমে ভিসার ধরন অনুযায়ী ভিসা ফি প্রদান করতে হবে।

পরবর্তীতে আপনাকে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার জন্য একটি নির্ধারিত তারিখ বেঁধে দেওয়া হবে সাক্ষাৎকারের জন্য। উক্ত তারিখে দূতাবাস এ গিয়ে পাসপোর্ট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য নেয়া হবে। দূতাবাস যদি আপনার ব্যবহার এবং আপনার সমস্ত নথি সঠিক এবং নির্ভুল আছে বলে মনে করে তাহলে আপনার ভেসে আবেদনটি দ্রুত প্রসেসিং করতে পারে। একেক ধরনের ভিসার ক্যাটাগরি ক্ষেত্রে একেক ধরনের সময় লেগে থাকে। এবং অনেক সময় ভিসা পাওয়াটা ভাগ্যের উপর নির্ধারণ হয়।

আপনার আবেদনটি গৃহীত হলে উক্ত দেশের ওয়েবসাইট থেকেই ভিসা চেক করতে পারবেন, এবং একটি নির্দিষ্ট তারিখ পরে আপনার পাসপোর্টটি দূতাবাস থেকে ফেরত দেওয়া হবে ভিসা ডকুমেন্টসহ।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।