পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম জানুন

যাদের হাতে ই পাসপোর্ট অথবা এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে এবং পাসপোর্ট এর মেয়াদ অলরেডি শেষ হয়ে গেছে কিংবা খুব শীঘ্রই সম্ভবত মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, তাদের অবশ্যই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম জানতে হবে, এবং এই নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্ট রিনিউ করতে হবে।

বর্তমানে পূর্বের মতো আর অফলাইনে পাসপোর্ট নবায়ন করার আবেদন করা যাচ্ছে না, একমাত্র অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে আপনার পাসপোর্টটি নবায়ন করতে পারবেন। আপনি যদি বর্তমানে বিদেশ অবস্থান করে থাকেন তাহলে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে পাসপোর্টটি রিনিউ করতে পারবেন। এবং দেশে থাকলে আপনার আঞ্চলিক/ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্টটি নবায়ন করার আবেদন করে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।

যেহেতু বৈধ পাসপোর্ট থাকা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য অপরিহার্য। তাই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আপনাকে অবশ্যই এটি রিনিউ করতে হবে। এই পোস্টে, আমরা ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪ এবং পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে এ সম্পর্কে ধাপে ধাপে আলোচনা করব।

জানুন পাসপোর্ট রিনিউ করার গুরুত্ব

আপনার পাসপোর্ট এর যদি মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অবশ্যই মেয়াদ উত্তীর্ণ পাসপোর্ট দিয়ে আপনি কোন দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন না, যেহেতু পাসপোর্ট আপনার পরিচয় এবং নাগরিকত্ব প্রমাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই কিংবা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পাসপোর্টটি অবশ্যই রিনিউ করে নিবেন। আর অনেক দেশে ভ্রমণের জন্য বৈধ পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস হতে হয়।

পাসপোর্ট রিনিউ করার পূর্বে যা করণীয়

  • প্রথমত , আপনি পাসপোর্ট যেই আঞ্চলিক অফিস থেকে সংগ্রহ করেছিলেন পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদন করার পরে কাগজপত্র ঠিক একই অফিসে দাখিল করতে হবে, অর্থাৎ উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি প্রথম অবস্থায় রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট নিয়ে থাকেন তাহলে পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করতে হবে।
  • আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই পাসপোর্ট নবায়ন করতে কি কি লাগে সেই সমস্ত ডকুমেন্ট সম্পর্কে অবগত হন এবং পূর্বেই ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করুন।
  • পাসপোর্ট রিনিউ ফি সম্পর্কে জানুন এবং কিভাবে এটি পরিশোধ করতে হয় এটি দেখুন।
  • রিনিউ করার ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার জন্য অবশ্যই epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে, পূর্বে অ্যাকাউন্ট থাকলে সেটা লগইন করুন অথবা নতুন একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।

পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম

পাসপোর্ট রিনিউ কিংবা নবায়ন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনলাইনে ই পাসপোর্ট ওয়েবসাইট www.epassport.gov.bd লিংকে গিয়ে একটি নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে। এ সময় অবশ্যই আপনাকে উল্লেখ করতে হবে যে আপনার অলরেডি একটি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অথবা ই পাসপোর্ট রয়েছে এবং সেটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। এর পরের কার্যক্রম ঠিক একটি নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার মত ধাপে ধাপে সম্পন্ন করতে হবে। এভাবেই আপনার পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জেলায় পাসপোর্ট আবেদন কিংবা সংশোধন অথবা রিনিউ কার্যক্রম চালু আছে। আর বর্তমানে আপনার হাতে যদি একটি এমআরপি পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি নবায়ন করার সাথে সাথে ই পাসপোর্ট হয়ে যাবে, অর্থাৎ আপনি আর মেশিন রিডেবল বা এমআরপি পাসপোর্ট পাবেন না।

আপনি অনলাইনে নিজেই পাসপোর্ট রিনিউ করার ফর্ম পূরণ করতে পারবেন। পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্টের তথ্য প্রদান করা হয়। যদিও রিনিউ করার সময় আপনাকে অবশ্যই পূর্ববর্তী পাসপোর্ট নাম্বার প্রদান করতে হবে আর উক্ত পাসপোর্ট নাম্বার প্রদান করলেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অটোমেটিক চলে আসবে।

যদি কোন তথ্য সংশোধন কিংবা পরিবর্তন করতে হয় তাহলে অবশ্যই পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন করতে হবে।

পাসপোর্ট সংশোধন সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনের বলা হয়েছে নতুন পাসপোর্টগুলোতে Personal Data and Emergency Contact Page এ Spouse Name এর পরিবর্তে Legal Guardian’s Name অপশনটি থাকবে। এবং পাসপোর্টে কোন কিউআর কোড থাকবে না।

অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ আবেদন করার নিয়ম

পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আপনাকে epassport.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে Apply for New Passport লিঙ্কে প্রবেশ করতে হবে। এর পরে প্রাথমিকভাবে আপনাকে Passport Type এবং পাসপোর্টধারীর Personal Details এবং Address দিবেন। এরপরের ধাপে ID Documents অপশনে আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর তথ্য এবং ইস্যু করার বিস্তারিত কারণ উল্লেখ করুন।

পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম

এখানে আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এমআরপি হয়ে থাকলে Yes, i have a machine readable passport (MRP) , এবং পূর্ববর্তী পাসপোর্ট যদি ই পাসপোর্ট হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে Yes, I have Electronic Passport (ePP) অপশনটি বাছাই করুন।

এর পরের ধাপে What is the reason for your passport request? অপশন থেকে আপনার পাসপোর্টটি কোন কারণে ইসু কিংবা রিনিউ করবেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে ।

পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম

এখানে অনেকগুলো অপশন দেখতে পাবেন যেমন-

  • CONVERSION TO EPASSPORT- এমআরপি থেকে ই পাসপোর্ট নবায়ন
  • EXPIRED- পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ
  • LOST/ STOLEN- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে
  • DATA CHANGE- তথ্য সংশোধনের জন্য
  • UNUSABLE- পাসপোর্ট নষ্ট বা ছিড়ে গেলে।
  • OTHER- অন্যান্য

আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই EXPIRED সিলেক্ট করতে হবে, অথবা আপনার যদি অন্য কোন কারণ থাকে সেটি উল্লেখ করুন আপনার সুবিধামতো। এরপর আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্ট নাম্বার এবং পাসপোর্ট প্রদানের ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লিখতে হবে।

পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম

এরপর ধারাবাহিকভাবে যেমন একটি নতুন পাসপোর্ট আবেদন করবেন ঠিক তেমনি পাসপোর্ট এর পেজ সংখ্যা, পাসপোর্ট এর মেয়াদ, এবং অন্যান্য তথ্য লিখতে হবে। আবেদন করা শেষে অবশ্যই পাসপোর্ট আবেদন আইডি নম্বর সংগ্রহ করে রাখবেন। এবং আবেদন কপিটি প্রিন্ট করে নিবেন। এরপরে আপনার আবেদন পত্রের সাথে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংযুক্ত করে আপনার আঞ্চলিক অথবা বিভাগীয় পাসপোর্টে জমা দিতে হবে।

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কি কি লাগে?

  • আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি
  • পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রশিদ
  • জাতীয় পরিচয় পত্র/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর মেইন এবং ফটোকপি
  • সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে GO/NOC
  • রেজিস্ট্রেশন ফরম

পাসপোর্ট রিনিউ করতে কত টাকা লাগে?

নতুন পাসপোর্ট আবেদন এবং পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি একই। সেক্ষেত্রে আপনাকে ৫ বছরমেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৪ হাজার ২৫ টাক, ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা। অন্যদিকে ১০ বছরমেয়াদী ৪৮ পৃষ্ঠার জন্য ৫ হাজার ৭৫০ টাকা ও ৬৪ পৃষ্ঠার জন্য ৮ হাজার ৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। পাসপোর্ট ফি এ চালান কিংবা বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে।

পাসপোর্ট রিনিউ হতে কত সময় লাগে?

সাধারণত একটি নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার ক্ষেত্রে যে কয়েকটি প্রসেস সম্পন্ন হয় তবে পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে এত প্রসেস দরকার হয় না। যেমন পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে কোন পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার হয় না (ক্ষেত্রবিশেষ)। এজন্য পাসপোর্ট রিনিউ হতে খুব কম সময় লাগে। বলতে গেলে সর্বোচ্চ 15-21 দিন সময় লাগতে পারে পাসপোর্ট রিনিউ হতে। এটা নির্ভর করবে পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য আপনি কত টাকা ফি প্রদান করেছেন তার উপরে।

পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলো মানুষ বেশি করে

  • ভুল তথ্য প্রদান – আবেদন করার সময় ব্যক্তিগত কিংবা অন্যান্য তথ্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে গরমিল হলে আবেদন বাতিল হতে পারে
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব – রিনিউ করার জন্য পর্যাপ্ত কাগজপত্র না থাকলে আবেদন বাতিল হবে
  • অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা – অনলাইনে কিভাবে আবেদন করতে হয় এটি না জেনেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, এক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে আবেদন করে নিবেন।
  • দ্রুত প্রসেসিংয়ের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান – দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকেই অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে তার পাসপোর্টটি দ্রুত হাতে পাওয়ার জন্য এটা মোটেও উচিত নয়।
  • পাসপোর্ট ফি পরিশোধে বিলম্ব বা ভুল করা – আপনি যদি পাসপোর্ট ফি পরিশোধ ছাড়াই আবেদন সম্পন্ন করতে চান তাহলে এটি সম্ভব না, আপনাকে প্রাথমিকভাবে ফি পরিশোধ করে চালান কপি কিংবা ব্যাংক কপি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে, অবশ্যই আবেদন করার সময় আপনি যত পৃষ্ঠার এবং যত বছর মেয়াদী পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেছেন আপনাকে সেই নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি করতে হবে।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহ – FAQ

পাসপোর্ট এর উপর কোন বিধি-নিষেধ না থাকলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী সময় যতবার ইচ্ছা পাসপোর্ট রিনিউ করা যাবে।

পাসপোর্ট করা কালীন সময়ে বাচ্চার বয়স যদি ১৯ বছরের নিচে হয়ে থাকে এবং বর্তমানের বয়স যদি ১৯ বছরের উপরে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে উপরের প্রদত্ত নিয়ম অনুযায়ী কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে। এবং বাচ্চার বয়স যদি 19 বছরের নিচে হয় তাহলে সাধারণত সমস্ত নিয়ম একই রেখে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আবেদন করা যাবে।

না, পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে কোন পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার হয় না, তবে ক্ষেত্র বিশেষে পুলিশ ভেরিফিকেশন দরকার হতে পারে, সব ক্ষেত্রে নয়।

Similar Posts

2 Comments

  1. আমার পূর্ববর্তি MRP পাসপোর্টে স্পাউসের ডাকনাম দেওয়া। কিন্তু এনআইডি কার্ডে বংশগত নাম দেওয়া।এখন আমি স্পাউসের বংশগত নাম টিক রেখে পাসপোর্ট বানাতে চাই তা না হলে সৌদি আরব ইমিগ্রেশনে আমাকে আটকাবে।এক্ষেত্রে আমার কি করণীয়

    1. বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টে Spouse নাম থাকবে না৷ Legal Gardian থাকবে৷ যেহেতু আপনার বিষয়টা ভিন্ন এবং সংবেদনশীল। এ বিষয়ে তথ্য পাওয়ার জন্য পাসপোর্ট হেল্প লাইন ১৬৪৪৫ নম্বরে কল করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।